পবিত্র বেদ থেকে “পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য “

কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল “এই পৃথিবী ও বিশ্ব ব্রাহ্মান্ড”। বেদে বিজ্ঞানের বিষয়ে কি বলে। জ্ঞান পিপাষু মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা এখনো। সৃষ্টির এই নিগুঢ় তত্ত্ব নিয়ে পবিত্র বেদ এর বিখ্যাত নাসাদিয় সুক্ত এবং হিরন্যগর্ভ সুক্তের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত সারবস্তু ও বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু মন্ত্র আজ তুলে ধরব।

চলুন দেখে নিই পবিত্র বেদ থেকে

“নাসাদাসিন্নো সদাসিত্

তদানীম নাসিদ ঢ়জ ন ব্যোমা পরো

যৎ…শার্মন্নম্ভঃ কিম আসীদ ঘনং গভীরম্।। (ঋগ্বেদ-১০,/১২৯/১)

অর্থঃ- শুরুতে কোন অস্তিত্ব (সৎ) বা অনস্তিত্ব (অসৎ) ছিলনা।সেখানে ছিলনা কোন শুন্যস্থান নাকোন পদার্থ,কোন কণা,না কিছুই না!

“তম অসিৎ তমসা

তপসস্তন্মহিনাজায়াতৈকম্”(ঋগবেদ ১০/১২৯/৩)

অর্থঃ এই সমস্ত বিশ্বের সৃষ্টির পূর্বে সব ই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন,শুধুই অন্ধকার,অন্ধকারের চেয়েও যেন অন্ধকার। সেখানে তাপের সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত উদ্ভূতহলো।

হিরন্যগর্ভ সমবর্ততাগ্রে (ঋগবেদ ১০/১২১/১)

অর্থঃ প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল।

আপো হ য়দ

বৃহতির্বিশ্বম আয়ন গর্ভম জনয়ন্তীর অগ্নিম্ (ঋগবেদ ১০/১২১/৭)

অর্থ:-  সেই হিরন্যগর্ভে ছিল আয়নযুক্ত উত্তপ্ততরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ

ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তদ্বির ন রাত্র্যা অহ্ন আসীৎ প্রকেতঃ। 

আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধন্যন্নঃ পরঃ কিং চনাস।। ( ঋগ্বেদ ১০/১২৯/২)

অর্থঃ-  অর্থাত্ সৃষ্টির রচনার পূর্বে কোন জীবন বা মৃত্যু ছিল না। দিন রাত্রি ও ছিল না।কারন চন্দ্র সূর্য ও ছিল না। সেই সময় সৃষ্টি, বিসৃষ্টি ও কিছু জানার যোগ্য ছিল না। অবিচল স্থিতি ছিল। সেই সময় শক্তি (Energy) অবশ্যই ছিল। শক্তি দুই প্রকার সুপ্ত শক্তি (Protentiol Energy)  ও গতিসঞ্জাত শক্তি(Kinetic energy) এ শক্তি গুলি তখন ক্রিয়াশীল ছিল না। 

পুমাং এনং তনুতউৎ কৃণত্তি পুমান্

বি তত্নে অধি নাকে অস্মিন্।

ইমে ময়ুখা উপ সেদুরুঃ সদঃ

সামানি চক্রুস্তসরাণ্যেতবে।। ( ঋগ্বেদ ১০/১৩০/২)

অর্থঃ- এখানে বলা হয়েছে যে, শক্তি( Energy) তরঙ্গরপে প্রকট হয় এবং প্রকৃতিতে নির্মাণ কার্য শুরু হয়ে যায়। তরঙ্গ তির্যক গতিতে চলে। সেই সব তরঙ্গ প্রকৃতির সাম্যাবস্হায় পরমাণু সহ সঙ্ঘৃষ্ট হয় এবং তার সাম্যাবস্হা ভঙ্গ করে দেয়।।

সপ্ত য়ুঞ্জন্তি রথমেক চক্রমেকো অশ্বো বসতি সপ্তনামা।

ত্রিপাভি চক্রমজরমনর্বং য়ত্রেমা বিশ্বা ভুবনাধি তস্হূঃ।। (ঋগ্বেদ- ১/১৬৪/২)

অর্থঃ- কার্য জগতের পালক এক অতি তেজোময় ব্যক্তিত্ব তার সাত পুত্রকে আমরা দেখি। এখানে পুত্রের অভিপ্রায় প্রাণ। সেই সাত প্রাণ এক চক্রের সহিত সংযুক্ত। সে চক্র ভগ্ন বা শিথিল হয় না। চক্র অশ্ব দ্বারা চালিত। চক্রের তিন নাভি অর্থাৎ আশ্রয় স্হল। 

অশ্ব বলতে পরমাত্মা, তিন আশ্রয় প্রকৃতি, আত্মা, পরমাত্মা বুঝায়। জগতে এক অশ্বই সমস্ত ভুবন পরিচালনা করছে। সাতচল্লিশ প্রাণ তাঁর সাতটি সামর্থ। এই সামর্থগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রকারে বলা যেতে পারে-(এক) পরমাণু মধ্যে ইলেক্ট্রোনের ঘুর্ণন শক্তি (Inter atomic energy), (দুই) রাসায়নিক শক্তি   (Chemical energy),  (তিন) অনুদের  মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখার শক্তি(lnter molecular dynamics), অথবা সংগঠন শক্তি, এর দ্বারা শক্ত,তরল ও বায়ব্য ( Solids Liquids, Gasses)  অবস্থা  উৎপন্ন হয়। ( চার) ভূ-আকর্ষণ  (Gravity), (পাঁচ) চুম্বকীয় শক্তি (Magnetism) ( ছয়) আকাশ ও শব্দ(  Light and sound) (সাত) বায়ু

অহস্তা যদপদী বর্ধত ক্ষা শচীভির্বেদ্যানাম্। 

শূষ্ণং পরিপ্রদাক্ষিণিদ্ বিশ্বায়বে নিশিশ্নথঃ।। (ঋগ্বেদ- ১০/২৩/১৪)

অর্থঃ পৃথিবী যদিও  হস্তপদহীন তথাপি ইহা চলিতেছে, অবশ্য জ্ঞাতব্য পরমাণুর শক্তির দ্বারা সূর্যের চারিদিকে ইহা প্রদক্ষিণ করিতেছে। হে পরমাত্মন! সমগ্র মানবের মধ্যে  আস্তিক্য বোধ জানাইবার জন্যেই তুমি এরূপ রচনা করিয়াছেন

তিস্রো মাতৃস্ত্রীন্ পিতৃন্ বিভ্রদেক ঊর্ধ্বস্তস্হৌ নেমব গ্লাপয়ন্তি।

মন্ত্রয়ন্তে দিয়ো অমুষ্য পৃষ্ঠে বিশ্ববিদং বাচমবিশ্বমিন্বাম্।। (ঋগ্বেদ-১/১৬৪/১০)

অর্থ:- মাতা পৃথিবী, পিতা সূর্য। প্রাণীর শরীরে তিন অংশ মাতার (পৃথিবী) থেকে আসে এবং তিন অংশ পিতা (সূর্য) থেকে আসে। মাতার দিক থেকে আসে মাটি, জল, বায়ু ( তিনই পঞ্চভৌতিক) এবং সূর্যের দিক থেকে আসে অগ্নি ও আকাশ( এই দুটিও পঞ্চভৌতিক) পিতা অর্থাত্ সূর্য থেকে তৃতীয় যে অংশটি আসে সেটা হলো প্রাণ। অগ্নিও প্রাণে পার্থক্য  আছে। 

অগ্নি যা পিতার অংশ থেকে আসে প্রাণীর শরীর নির্মাণ হেতু উপলব্ধ, তা রাসায়নিক শক্তি  এবং অন্তকরণ ও দশ ইন্দ্রিয় কার্য  শক্তি। প্রাণ চেতনার প্রতীক।এই ভাবে প্রাণীর শরীর ছয়টি অংশ মাতার(পৃথিবী) দিক থেকে তিনটি এবং  পিতার(সূর্যের) দিক থেকে তিনটি আসে তখন  এর মধ্যে নিবাস করার জন্য জীবাত্মার আগমন হয়। যখন একবার এসে যায় তখন সহজে পৃথক হয় না।

আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদম্মাতরং পুরু। 

পিতরং চ প্রয়ন্ত্স্বঃ। (যজুবেদ-০৩-০৬)

অর্থঃ- ”গৌ’ শব্দে পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্রাদি লোক বুঝায়। এরা আপন আপন পরিধিতে(কক্ষপথে) অন্তরীক্ষে সদা ভ্রমন করে। জলকে পৃথিবীর মাতা জ্ঞান করা কর্তব্য। যেহেতু পৃথিবী, জল বা অপর পরমাণু এবং পৃথিব্যাদির পরমাণুর সংযোগরূপ বিকার হতে উৎপন্ন হয়, মেঘ মন্ডলস্হ মধ্যে পৃথিবী গর্ভস্হিত বীজের ন্যায় বর্তমান থাকে। এইরূপ সূর্য অগ্নিময় হওয়ায় পিতৃতুল্য এবং সেই জন্যেই যেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করে থাকে।

পুনশ্চ সূর্য বা অগ্ন্যাদি রূপ তেজের পিতা বায়ু ও মাতা আকাশস্বরূপ। এই রূপে চন্দ্রের পিতা অগ্নি ও জল মাতা স্বরূপ হয়ে থাকে। এই চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে প্রদিক্ষণ করে থাকে। পুনশ্চ  সূত্রাত্মারূপী বায়ুর আধার ও আকর্ষণ দ্বারা সমগ্র লোকের ধারণ ও পালন হয়ে থাকে।

য়ুঞ্জন্তিং ব্রধ্নমরুষং চরন্তং পরিতস্হূষঃ।

রোচন্তে রোচন্তে দিবি।। (ঋগ্বেদ- ১\ ৬\১)

অর্থঃ- (পরিতস্হূষঃ চরন্তং ব্রধ্নং অরুষং য়ুঞ্জন্তি) চতুর্দিকে ব্যাপক, স্থির (পরমাণু) যখন ব্যাপক শক্তি( প্রাণ) সহযুক্ত হয়। (রোচনা দিবি রোচন্তে) প্রকাশমান অন্তরিক্ষে প্রকাশিত হতে হতে থাকে। অভিপ্রায় এই যে, সর্বত্র বিদ্যমান সাম্যবস্থায় পরমাণু যখন পরমাত্মার শক্তি (প্রাণ) সহ সংযুক্ত হয়ে যায় তখন তারা জাগ্রত হয়ে যায়। এই জাগ্রতাবস্থা ইন্দ্রের শক্তির বাহিরে উঁকি মারার ফলে উৎপন্ন হয়।

য়ুঞ্জনত্যস্য কাম্যা হরী বিপক্ষসা রথে।

শোণা ধৃষ্ণু নৃবাহসা।। (ঋগ্বেদ- ১\ ৬\ ২)

অর্থ-( য়ুঞ্জন্তি অস্য রথে কাম্যা হরী বিপক্ষসা। শোনা ধৃষ্ণু নৃবাহসা।) তখন এই রথের কামনা করে দুটি অশ্ব দুটি পক্ষ থেকে প্রকট হয়। এরা জাজ্বল্যমান দৃঢ়তা সহ রথে উপবিষ্ট পদার্থকে সংগে করে নিয়ে যায়।( বেদে রূপক, উপমা অলঙ্কার বহু প্রযুক্ত হয়েছে। এই অলঙ্কার না জেনে অনেকে বিরুদ্ধ অর্থ ব্যবহার করে। মনে রাখতে হবে বেদে স্ববিরোধিতা নেই।)

এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, রজস্ ও তমস্ শক্তি বহির্মুখ হয়ে রথকে ইতস্ততঃ নিয়ে যায়। এগুলি ইন্দ্রের শক্তি। ইন্দ্রের তৃতীয় শক্তি তমস্ তো নিষ্ক্রিয়, রজস্ ও সত্ত্ব পরমাণু সহ দৃঢ়তা পূর্বক সংযুক্ত।

পরমাণুকে “রথ” বলা হয়েছে। ভাতরে উপবিষ্ট ইন্দ্র প্রকট হয়।  তা এর দুই গুন “রজস্” ও সত্ত্ব রথের পার্শ্ব ভাগে প্রকট হয়। তারা রথকে দুই ভাগে অশ্বের মত রথের সংখ দৃঢ়তা সহ সংযুক্ত পূর্বক সংযুক্ত  করেছে। অশ্ব কামনাকারী, তারা আকর্ষন বিকর্ষন করে এবং রথ দৃঢ়তা পূর্বক সংযুক্ত রথে উপস্থিত উপ্দান পদার্থকে সংগে নিয়ে যায়। 

(এখানে সত্ত্ব(+) ধনাত্বক এবং রজস্(-) ঋনাত্বক, অশ্বের মত পরমাণুকে অন্তরিক্ষে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।)

ত্রীণি ত আহুর্দিবি বন্ধনানি তীন্যপ্সু ত্রীন্যন্ত সমদ্রে।

উতেব মেরুণশ্ছনৎ স্যর্বন্যত্রা ত আহুঃ পরমং জনিত্রম্।। (ঋগ্বেদ- ১/১৬৩/৪)

অর্থঃ- দ্যুলোকে এই তিন প্রকার বন্ধনই আপঃ হয়ে যায়। হে অর্নব! আমার ছন্দ বরুন বলে। এই তিনটি পদার্থ মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ জগৎ নির্মান করে। বর্তমান বিজ্ঞানে তিনটি অ্যাটমিক্ পাটিকেলস্  জগতের সৃষ্টি করে। এই তিন বন্ধনকেই অ্যাটমিক্ পাটিকেলস্ বলা হয়।

বেদে এই তিন বন্ধনের নাম মিত্র, বরুন ও অর্যমা। মিত্র ঋণ(-) বিদ্যুতের আবেশ, একে ‘ইলেক্ট্রন’ বলা হয়। বরুণ ধন(+) বিদ্যুতের আবেশ, একে   ‘প্রোটন’ বলা হয়। আবেশরহিত অর্যমা কে বর্তমান বিজ্ঞানে নিউট্রন বলা হয়।

য় ইন্দ্রায় বচোয়ুজা ততক্ষুর্মনসা হরী। 

শমীভির্য়জ্ঞমাশসত।।(ঋগ্বেদ- ১\২০\২)

অর্থঃ- (য়ে ঋভবঃ) যে সূর্যকিরণ গুলি (ইন্দ্রায়) শিল্প যজ্ঞের যজমান হেতু (মনসা) বিজ্ঞানের প্রয়োগ দ্বারা ( বচোয়ুজা) বলামাত্র যুক্ত হওয়ায় (হরী) ধনও ঋণ নামক দুই বিদ্যুকে (ততক্ষণঃ) রচনা করে, তারা (শমীভিঃ) সে বিদ্যুতের ক্রিয়া দ্বারা (য়জ্ঞম্) শিল্প যজ্ঞাকে (আশত) ব্যাপ্ত করতে থাকে। 

হিরণ্যগর্ভ সববর্ততাগ্রে ভূতস্য জাত পতিরেক আসীৎ। যজুর্বেদ-১৩\১৪।

অর্থঃ- অগ্নীর পূর্বে জ্যোতি, সূর্যের পূর্বে অগ্নি ছিল। সেই কারনে অগ্নিকে পূর্বরূপ আর সূর্যকে পশ্চাৎ রূপ বলে।

কঃ স্বিদেকাকী চরতি ক উ স্বিজ্জায়তে পুনঃ। যজুর্বেদ-২৩\৯

সূর্য একাতী চরতি চন্দ্রমা জায়তে পুনঃ। যজুর্বেদ-২৯\১০।

অর্থঃ- সূর্য কারও পরিক্রমা করে না। সেই নিজের অক্ষে ভ্রমনরত। চন্দ্র ও পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ভ্রমন করে।

কৃষ্ণং নিয়ানং হরয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎ পতন্তি।

ত আববৃত্রন্ ৎ সদনাদতস্যাদিদ্ ঘৃতেন পৃথিবী ব্যুদ্যতে। (ঋগ্বেদ-১/১৬৪/ ৪৭)

অর্থ- সুর্যের তীব্র কিরণ জলের উপর পতিত হয় এবং জলকে হরণ করে নিয়ে যায়। সেই জল বাদল রুপে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। সেই কারনে যেই স্থানে বাদল বা মেঘ থাকে সেইখানে সূর্যের আলো পরে না। আবার প্রকৃতির নিয়মে বাদল বা মেঘ জলরূপ পরিগ্রহ করে পূথিবীর উপর বর্ষন করে ভূমিকে আদ্র করে।

য়দি নো গাং হংসি য়দ্যশ্বং য়দি পুরুষম্।

তং ত্বা সীমেন বিধ্যামো যথা নোৎসো অবীরহা।। (অথর্ববেদ- ১/১৬/৪)

অর্থ:- যদি তুমি আমাদের গাভি, অশ্বও পুরুষদের হনন কর তাহলে আমরা তোমাকে সীসকের গুলি দ্বারা বিদ্ধ করিব।

সুমিত্রিয়া নৎ আপৎ ওষধুয়ঃ

সন্তুদুর্মিত্রিয়াস্তস্মৈ সন্তু য়োস্মান্ দ্বেষ্টি য়ং চ বয়ং দ্বিস্মঃ। (যজুর্বেদ-৬ /২২)

অর্থঃ- হে পরমেশ্ব! আপনার কৃপাবলে যে প্রাণ ও জলাদি পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে ও সোমলাতাদিরূপ ঔষধি সকল আমার জন্য সুখকারক ও সুখদায়ক হউক।

য়থা সোম ওষধীনামুত্তমো হবিষাং কৃতঃ।

তলাশা বৃক্ষা ণামিবাহং ভূয়াসমুত্তমঃ।। (অথবর্বেদ-৬/১৫/৩)

অর্থঃ- ঔষধী অর্থাৎ বনস্পতির সাররূপ সোমতত্ত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। আমি তাকে প্রাপ্ত করে তদ্রপ হয়ে যাই অর্থাৎ রোগরূপী মহাব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে উত্তম স্বাস্থ্যবান হয়ে যাই।

( মন্তব্যঃ বেদে বর্ণিত “সোম” অন্য কোন পদার্থ নয় সে তো সার স্বরূপ প্রাণতত্ত্ব যা সৌম্যগুন বনষ্পতি ও বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত জীবনী শক্তি। বেদে সোমের ব্যবহার বহুবার এসেছে।

যারা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক কৃত “অথর্ববেদীয় চিকিৎসা শাস্ত্র” এবং বৈদ্য পঃ রামগোপাল শাস্ত্রীর কৃত ” বেদোঁ মেঁ আয়ুর্বেদ” বই দুটি অবশ্যই পাঠ করবেন।)

ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুষরূপ ঈয়তে।

য়ুক্তা হাস্যঃ হরয়ঃ শতা দশ।।

অর্থঃ- বহুরূপধারী সূর্য নিজ শক্তি সহ গতি করছে। তার সহস্র কিরণ যন্ত্রকলা ও বিমানাদী যানে যুক্ত হয়।

সনাতন ধর্মের দর্শন এমন একটি বিষয় যেখানে ধর্ম ও বিজ্ঞান বেদে একসঙ্গে চলে। যখন ধর্ম বিজ্ঞান বিহীন হবে তখন অন্ধবিশ্বাস বৃদ্ধি হবে। যখন বিজ্ঞান ধর্মহীন হবে তখন পাশবিকতা বৃদ্ধি হয়ে মানুষ বিনাশের দিকে অগ্রসর হবে। সুতরাং ধর্ম ও বিজ্ঞানের সমন্বয় হওয়া উচিত। বেদেও তাই বলেছে।

বিদ্যাং চাবিদ্যাং চ য়স্তদ্বেদোভয় সহ।

অবিদ্যয়া মৃত্যুং তির্ত্বা বিদ্যয়াৎ মৃতমশ্নুতে। ( যজু -৪০\১৪)

অর্থ- যে মনুষ বিদ্যা ও অবিদ্যার স্বরূপ এক সংগ জ্ঞাত হয়, সে অবিদ্যা দ্বারা মৃত্যু উত্তীর্ণ করে, বিদ্যা দ্বারা অমৃতত্ব প্রাপ্ত হন।

সুতরাং বেদ পূর্বে ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

পশ্য দেবস্য কাব্যং ন মমার ন জীয়তী। (অথর্ববেদ-১৮/১০/২৪)

পরমাত্মার কাব্য(বেদ) এই বেদ কখনো জীর্ন হয় না, মরে না।।

আসুন আমরা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি। নিজে জানি এবং অন্যকে জানাতে সাহায্য করি।

ওম্ শান্তি শান্তি শান্তি।

বেদে বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রঃ-

(সহায়ক গ্রন্থঃ- শ্রী সতীশ চন্দ্র মন্ডলের বেদে বৈজ্ঞানিক চিন্তা) 

Avatar

এই ব্লগসাইট থেকে যদি কোন ভক্তদের বিন্দু মাত্রও লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment