তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতিপূর্বকম্।
দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তি তে।।১০।
অনুবাদঃ যাঁরা ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক আমার ভজনা করে নিত্যযুক্ত, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন।
তাৎপর্য : এই শ্লোকে বুদ্ধিযোগম্ কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সম্পর্কে দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা আমরা স্মরণ করতে পারি। সেখানে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন যে, তিনি তাঁকে বুদ্ধিযোগ সম্বন্ধে উপদেশ দেবেন।
এখানে সেই বুদ্ধিযোগের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বুদ্ধিযোগের অর্থ হচ্ছে কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম। সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তি। বুদ্ধির অর্থ হচ্ছে বোধশক্তি এবং যোগের অর্থ হচ্ছে অতীন্দ্রিয় কার্যকলাপ অথবা যোগারূঢ়। কেউ যখন তাঁর প্রকৃত আলয় ভগবৎ-ধামে ফিরে যেতে চান এবং সেই উদ্দেশ্যে কৃষ্ণভাবনাময় ভগবৎ-সেবায় সম্যকভাবে নিযুক্ত হন, তখন তাঁর সেই কার্যকলাপকে বলা হয় বুদ্ধিযোগ।
পক্ষান্তরে, বুদ্ধিযোগ হচ্ছে সেই পন্থা, যার ফলে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সাধনার পরম লক্ষ্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। সাধারণ মানুষ সেই কথা জানে না। তাই, ভগবদ্ভক্ত ও সদগুরুর সঙ্গ অতি আবশ্যক। আমাদের সকলেরই জানা উচিত যে, পরম লক্ষ্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ এবং সেই লক্ষ্য সম্বন্ধে অবগত হলে, ধীরস্থির গতিতে সেই লক্ষ্যের দিকে ধীরে ধীরে অথচ ক্রমোন্নতির পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হওয়া যায় এবং অবশেষে সেই পরম লক্ষ্যে উপনীত হওয়া যায়।
কেউ যখন মানব-জীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে অবগত হওয়া সত্ত্বেও কর্মফল ভোগের প্রতি আসক্ত হয়ে থাকে, তখন সেই স্তরে সাধিত কর্মকে বলা হয় কর্মযোগ। কেউ যখন জানতে পারে যে, পরম লক্ষ্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীকৃষ্ণকে জানবার জন্য মনোধর্ম-প্রসূত জ্ঞানের আশ্রয় গ্রহণ করে, তাকে বলা হয় জ্ঞানযোগ এবং কেউ যখন পরম লক্ষ্য সম্বন্ধে অবগত হয়ে ভক্তি সহকারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন, তখন তাকে বলা হয় ভক্তিযোগ বা বুদ্ধিযোগ এবং সেটিই হচ্ছে যোগের পরম পূর্ণতা। যোগের এই পূর্ণতাই হচ্ছে জীবনের সর্বোচ্চ সিদ্ধির স্তর।
কেউ সদগুরুর আশ্রয় প্রাপ্ত হয়ে কোন পারমার্থিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, কিন্তু পারমার্থিক উন্নতি সাধনের জন্য যথার্থ বুদ্ধি যদি তাঁর না থাকে, তা হলে শ্রীকৃষ্ণ অন্তস্তল থেকে তাঁকে যথাযথভাবে নির্দেশ ।