গীতায় কি ভগবান নিরামিষ খেতে বলেছেন?

গীতার কোথাও নিরামিষ খাদ্য গ্রহনের কথা বলা নেই। কেননা আমিষ ও নিরামিষ খাবার উভয়ের মাধ্যমেই জীবহত্যা হয় এবং জীবহত্যা মহাপাপ। তবে আমাদের জীবন ধারনের জন্য খাদ্য গ্রহন করা আবশ্যক।

সে কথাই বেদে বলা হয়েছে- 

জীবস্য জীবস্মৃতম। 

অর্থাৎ জীবন ধারনের জন্য এক জীব অন্য জীবকে আহার করবে খাদ্যরূপে।

আবার বেদেই বলা হয়েছে- 

মাং হিংস্যাত্ সর্বানি ভূতানি 

অর্থাৎ কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।

বেদের উভয় বাক্যই আপাত দৃষ্টিতে স্ববিরোধী ও একে অপরের জন্য সাংঘর্ষিক।

কিন্তু গীতায় এ সমস্যার সমাধান দিয়েছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৩/১৩ বলেছেন-

যজ্ঞাশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে

সর্বকিল্বিষৈঃ ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাত্।।

ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারন তায়া যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে তারা কেবল পাপই ভোজন করে। এবং যে সমস্ত লোকেরা তাদের আত্ম তৃপ্তির জন্য নানা প্রকার খাদ্য খায়, শাস্ত্রে তাদের চোর বলে গণ্য করা হয়েছে।

বেদে আরো বলা হয়েছে-

আহারশুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ সত্ত্বশুদ্ধৌ ধ্রূবা স্মৃতিঃ স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্রন্থীনাং ব্রিপমোক্ষঃ”।

যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে খাদ্যসামগ্রী শুদ্ধ হয় এবং তা আহার করার ফলে জীবের সত্তা শুদ্ধ হয়। সত্তা শুদ্ধ হবার ফলে স্মৃতি শুদ্ধ হয় এবং তখন সে মোক্ষ লাভের পথ খুজে পায়। 

অর্থাৎ আমরা যদি পাপ করতে না চাই, আমরা যদি চোর হতে না চাই তবে আমাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করতে হবে। ভগবানকে কোন বস্তু নিবেদন বা অর্পণ করলে ঐ জীব হত্যার পাপ দুর হয় ভগবান সমস্ত পাপ হরণ করে নেন। এভাবে আমরা সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হতে পারব।

কিন্তু প্রশ্ন থাকে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কোন খাদ্য অর্পন করবো এবং কিভাবে অর্পন করবো।

গীতার ৯/২৬ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।

তদহং ভক্ত্যুপহ্বতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ॥

যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প ফল জল অর্পণ করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।

যদি কেউ চায় মাছ মাংস ডিম আদি যোকোন দ্রব্য ভগবানকে নিবেদন বা অর্পণ করা যেতে পারে। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় এই ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা নিষেধ করেছেন। অর্থাত্ ভগবান তাকে পত্র ,পুষ্প ,ফল জল (নিরামিষ দ্রব্য) প্রদান করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। যা তার অত্যন্ত প্রিয়। এখানে লক্ষণীয় তিনি অবশ্যই মাছ, মাংস, ডিম…..(আমিষ দ্রব্য) প্রদানের নির্দেশ করেন নি।

ভগবানের প্রিয় দ্রব্য প্রীতি সহকারে প্রদানের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের সেবাপরায়নতায় উত্সুক এবং শ্রীকৃষ্ণও এই রকম ভক্তের প্রীতি সহকারে প্রদত্ত দ্রব্য অত্যন্ত উত্সুকভাবে গ্রহণ করেন।

যা উক্ত শ্লোকের ৯/২৬ 

তদহং ভক্ত্যুপহ্বতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ 

আমি তার সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহন করি এই কথার দ্বারাপ্রমাণ করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনার সারমর্ম এই যে, আমরা চোর ও পাপী হতে না চাইলে ভগবানকে খাদ্য নিবেদন বা অর্পণ করতে হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার প্রিয় নিরামিষ দ্রব্য নিবেদন করতে হবে। অতঃপর উক্ত দ্রব্য প্রসাদরূপে গ্রহনের ফলে আমাদের হ্বদয়ের সকল পাপ বিদুরিত হবে। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি গীতায় নিরামিষ দ্রব্য প্রসাদরূপে গ্রহণ করার স্পষ্ট নির্দেশনা সর্ম্পকে অবগত হতে পারেন।

Avatar

এই ব্লগসাইট থেকে যদি কোন ভক্তদের বিন্দু মাত্রও লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment