শিব পূজায় বহূপ্রকার মদ গাজা নেশাদ্রব্য শিবকে প্রসাদ হিসাবে দেয় এগুলো কি ধরনের পূজা?

অনেক সময় অন্যধর্মের ব্যক্তিদের থেকে শুনতে হয় এই যে, আপনাদের শিব পূজায়  বহূপ্রকার মদ গাজা ইত্যাদি নেশাদ্রব্য শিবকে প্রসাদ হিসাবে দেয় তারপর নিজেরা সেটা গ্রহন করেন। আবার আপনাদের গৃহপ্রবেশের সময় তৃনাথ নামক একজনের পূজা করা হয় সেখানেও গাজা দেওয়া হয়।এগুলো কি ধরনের পূজা আপনাদের?

এগুলো  কথা শুনে প্রথমে মাথাটা নিচু হয়ে যায় এবং লজ্জিত হওয়া লাগে।এটা সত্যই লজ্জার বিষয় কারন আমি নিজেও এমনটা অনেক জায়গায় দেখেছি।

যদিও বা এগুলো আমাদের ধর্মে একটুও বিধান  নেই। তবুও এগুলো পৌরানিক ও লৌকিক অনুসারী দূরাচারীগন এগুলো করে থাকে এবং মনে করে এগুলোতে তাহাদের পূন্য অর্জন হয়। যদিও বা পুরানে কোথাও শিবের গাজা খাওয়ার কথা বা নেশাদ্রব্য সেবনের কোনো লক্ষন নেই তবুও ঐসব পাপী মূর্খরা এসব সেবন করিয়া থাকে এবং পূজায় ব্যাবহৃত করে থাকে।

কিন্তু আপনারা জানেন কি ? বেদে সাতটি মহাপাপ এর কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে নেশা/ মদ্যপান একটি। এমন কি বেদে এটাও বলা হয়েছে, তোমার বন্ধু নেশাকারী হলে তার সঙ্গ ত্যাগ করো।

মহর্ষি যস্ক তার নিরুক্ত সংহিতায় বেদের সেই সাতটি মহাপাপ এর কথা উল্লেখ করেছেন,সেগুলো হল, “চুরি, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার, হত্যা, ভ্রূননিধন, অগ্নিসংযোগ, নেশা/মদ্যপান, অসততা।

নকী রেবন্তং সখ্য বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরাশ্বঃ।

যদা কৃণোষি নদনুং সমূহস্যাদিৎ পিতেব হূয়সে।। (ঋগ্বেদ ৮/২১/১৪) 

পদার্থ :- ( ন)  না (কী) করা (রেবন্তং) ঐশ্বর্য্যবান ( সখ্য) বন্ধু বা প্রিয় ব্যাক্তি ( বিন্দসে) বিদ্যান ব্যাক্তি ( পিয়ন্তি)পরিত্যাজ্য ( তে) তাকে ( সুরাশ্বঃ)  সুরা বা মদ্য পানকারী ব্যাক্তি ( যদা) যখন (কৃণোষি) কৃপন বা কৃপনতা ( নদনুং) ত্যাগ করা (সমূহস্যাদিত) সমূহসকল (পিতেব) পরম পিতা পরমাত্বা ( হূয়সে)  শরনে আশা

অর্থ:- কৃপন ও নেশাগ্রস্ত ব্যাক্তি ঐশ্বর্য্যযুক্ত বা জ্ঞানবান হলেও পরিত্যাজ্য তাকে তোমরা বন্ধু রূপে গ্রহন কর না। যখন সে ব্যাক্তি কৃপনতা, নেশা ও সকল অবিদ্যা সমূহসকল ত্যাগ করে পরত্বাকে গ্রহন করে এবং তার  শরণে আসে তখন সে ব্যাক্তিকে তোমরা বিদ্বেষ কর না।

সুরা বৈ মলমন্নানাং পা চমলমুচ্যতে তস্মন ব্রাহ্মন

রাজন্যোবৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেত্।  (মনুসংহিতায় ১১.৯৪)

অর্থাৎ, সুরা হল অন্নের মলস্বরুপ, পাপরুপ। তাই ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যে অবশ্য বর্জনীয়।

হৃৎসু পীতাসো যুধ্যান্তে দুর্মদাসো ন সুরায়াম। 

উধর্ন নগ্না জরন্তে।। ( ঋগ্বেদ ৮/২/১২)

অর্থ:- মদ্যপায়ীগন হৃদয় খুলিয়া মদ্যপান করিয়া নিজেদের মধ্যে কলহ বিবাদ করে এবং উলঙ্গ হইয়া সারা রাত্রি প্রলপোক্তি করিতে থাকে তাহারা নিশ্চই দুষ্ট বুদ্ধি। 

ভাবার্থ:- যাহার হৃদয় খুলিয়া মদ্যপান আদি নেশাদ্রব্য গ্রহন করে তাহার নিজেদের মধ্যে তথা সংসার এবং পরিবারের মধ্যে বহূ কহল বিবাদ তথা মারামারি ঝগড়া ইত্যাদি করিয়া থাকে। তাহারা যত্র তত্র উলঙ্গ হইয়া যাই তাহারের লজ্জাবোধ থাকেনা। তাহারা সর্বক্ষন প্রলপোক্তি তথা গালাগালি করিতে থাকে তাহারা নিশ্চই দুষ্টবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তি তাহাদের পরিত্যাগ করা উচিৎ।

শুধু নেশাজাতীয় দ্রব্য নয় বেদে জুয়াখেলাকেও নিষিদ্ধ বলা হয়েছে।

অক্ষৈর্মা দিব্যঃ কৃষিমিত কৃষস্ব বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ।

তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া তন্মে বি চষ্টে সবিতায়মর্য।। (ঋগ্বেদ ১০.৩৪.১৩)

অর্থাৎ,” হে মনুষ্য, জুয়া বা পাশা খেলোনা, তোমার ভুমি আছে, অর্থসম্পত্তি অাছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো। তোমার পরিবার আছে, স্ত্রী আছে এসব নিয়ে সুখে থাকো। এটাই অালোকপ্রদর্শনকারী পরমাত্মার প্রদত্ত জ্ঞান।”

এগুলো অমঙ্গলীয় এবং পাপ কর্ম কারণ এমনিতেই যারা ঈশ্বর ব্যাতিত অন্য কাহারো উপাসনা করে যা সম্পূর্ণ বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ তার ওপর আবার তারা মাদক গ্রহন করছে যেখানে আমাদের পবিত্র বেদ মাদক গ্রহন করতে নিষেধ করছে তার পরেও  এগুলো নিয়ে মাতামাতি করে এবং  সম্পূর্ণ পাপ অর্জিত হচ্ছে।

আমাদের উচিৎ একমাত্র ঈশ্বরের উপাসনা করা এবং সাত্বিক ভাবে সেটা করা উচিৎ, যজ্ঞ,ধ্যান, যোগাভ্যাস, প্রাণায়াম, সন্ধ্যাপোসনা, যপ আদি ইত্যাদি শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিৎ।এবং আমাদের উচিৎ সকল মাদকদ্রব্য ত্যাগ করা, কারন আমরা জানি এটা কতোটা আমাদের শরীরের জন্য অপকারী ও ভয়াবহ।

তাই আসুন সনাতনীরা, নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করি, সেই সাথে যারা নেশা করে তাদের সঙ্গ পরিহার করি, জুয়া বা পাশাখেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখি, আদর্শ সনাতনী সমাজ গড়ি। ইহাই পরমাত্মার নির্দেশ।

Avatar

এই ব্লগসাইট থেকে যদি কোন ভক্তদের বিন্দু মাত্রও লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment