ঈশ্বর কোথায় বাস করেন?

ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান অতএব তিনি সব জায়গাতেই আছেন। যদি ঈশ্বর কোন একটা বিশেষ স্থানে যেমন কোন বিশেষ আকাশে অথবা কোন বিশেষ আসনে বাস করেন,  তবে তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, সকল কিছু পরিচালনাকারী সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং ধ্বংসকর্তা হতে পারবেন না। আমরা কোন স্থানে উপস্থিত না থেকে সে স্থানের কর্মগুলো সম্পাদন করতে পারব না।

ঈশ্বর কি একস্থানে থেকে জগতকে পরিচালনা করছেন, না ঠিক যেমন সূর্য অনেক দূর থেক পৃথিবীকে আলোকিত করছে

ঈশ্বর একস্থানে থেকে জগতকে পরিচালনা করছেন ঠিক যেমন সূর্য অনেক দূর থেকে পৃথিবীকে আলোকিত করছে অথবা যেমন আমরা রিমোটের মাধ্যমে টিভিকে নিয়ন্ত্রন করি এগুলো ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি। কারন সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারে বা রিমোট কন্ট্রোল টিভিকে চালনা করতে পারে বিকিরন তরঙ্গের মাধ্যমে যেটা অন্তবর্তী মহাশূণ্যের মধ্যে ভ্রমন করতে পারে। শুধুমাত্র আমরা এটাকে দেখতে না পাওয়ায় আমরা রিমোট কন্ট্রোল বলি। বাস্তবে রিমোট কন্ট্রোলের মতন কিছু নেই। তাই, বাস্তবতাটি হলো ঈশ্বর পরিচালনা করতে পারেন, এর দ্বারা বোঝায় তিনি সেখানে উপস্থিত থাকেন এটিকে পরিচালনা করতে।

উপরন্তু, ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হন কেন তিনি নিজেকে একটি ছোট স্থানে সীমাবদ্ধ রাখবেন? ঈশ্বর যদি নিজেকে সীমিত করেন, এটি ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করে তোলে। খ্রিস্টানরা বলে যে ঈশ্বর চতুর্থ আকাশে আছেন এবং মুস**নরা বলে যে আ**হ সপ্তম আকাশে আছেন। এবং তাদের অনুসারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের সঠিক প্রমাণ করার জন্য। এটা কি এমন যে, গড ও আ**হ আলাদা আলাদা বাস করার সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে তাঁরা তাদের রাগান্বিত অনুগামীদের মত যুদ্ধে না জড়িয়ে পরেন?

প্রকৃতপক্ষে, এইগুলো বালকসুলভ আলোচনা। যেখানে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং সমগ্র মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন কোন কারণ নেই যে তিনি নিজেকে মহাবিশ্বের একটি ছোট অংশে সীমিত করে ফেলবেন। এবং যদি তিনি তা করেন, তিনি সর্বশক্তিমান রূপে বর্ণিত হতে পারেন না।

এটা কি বোঝায় ঈশ্বর নোংরা জিনিস যেমন এলকোহল, প্রস্রাব ও মলমূত্রেও আছেন?

সমগ্র সৃষ্টি ঈশ্বরের মধ্যেই আছে। ঈশ্বর এই জিনিসগুলির বাইরেও আছেন, কিন্তু এই জিনিসগুলি ঈশ্বরের বাইরে বিদ্যমান নেই। অতএব, বিশ্বের সব কিছু ঈশ্বরের দ্বারা পরিব্যাপ্ত।

একটি মোটামুটি উপমা দিতে গেলে, আমরা ঈশ্বরের মধ্যে আছি ঠিক যেমনভাবে জলের একটি পাত্রের মধ্যে কাপড় একটি টুকরা থাকে। কাপড়ের ভেতরে, বাহিরে এবং সর্বত্র জল আছে । কাপড়ের এমন কোনও অংশ নেই যা শুকনো বা জল দিয়ে ভেজা নয়, তবে কাপড়ের পাশাপাশি জল কিন্তু বাইরেও আছে।

কোনো কিছু আমাদের জন্য নোংরা বা ভাল সেটি নির্ভর করে এটির প্রতি আমাদের দায়িত্ব কেমন তার উপর। সেই একই অণুর সেট মজাদার আম গঠন করে, তা আমরা খাই।  সেটি যখন নানাভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ও অন্য রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্রিয়া করে এবং মলমুত্র গঠন করে, তখন সেটা আমাদের জন্য নোংরা হয়ে যায়। কিন্তু মূলত, এই সমস্ত কিছু নিছকই প্রকৃতির কণার বিভিন্ন মাত্রার সংমিশ্রণ।

যেহেতু আমাদের এই পৃথিবীতে একটি বিচার পদ্ধতি (রুচিবোধ) আছে, আমরা প্রতিটি জিনিস বিশ্লেষণ করি বিচার পদ্ধতির (রুচিবোধ) সহিত সঙ্গতি রেখে। কিছু গ্রহণ করি বাকীটা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা প্রত্যাখ্যান করি যা আমাদের জন্য নোংরা, বা আবর্জনা, এবং আমরা গ্রহন করি আমাদের জন্য যা ভাল। কিন্তু ঈশ্বরের জন্য, এই ধরনের করনীয় কিছু নেই  অতএব, তার জন্য কিছুই নোংরা নয়। বিপরীতভাবে, তাঁর কর্তব্য আমাদের থেকে আলাদা, আমাদেরকে সহায়তা করা যাতে আমরা যথাযথভাবে আনন্দ অর্জন করতে পারি।  তাই তাঁর সমগ্র সৃষ্টিতে তাঁর জন্য অস্পৃশ্য কিছুই নেই।

যদি আপনি অন্য দৃষ্টান্তের দিকে তাকান, তবে ঈশ্বর একজন আদুরে সমাজকর্মীর মতো নন, যিনি এয়ার কন্ডিশনাল অফিসে বসে দূরবর্তী অবস্থানের পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন, কিন্তু যে বস্তিতে প্রকৃত সামাজিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে সেগুলি পরিদর্শন থেকে বিরত থাকবেন। বিপরীতে তিনি, আমাদের উপকারের জন্য নোংরাতম জায়গা পরিচালনা করতে বিদ্যমান থাকেন

যেহেতু তিনি একা সবচেয়ে নিখুঁত, যদিও তিনি সর্বত্র আছেন এবং তাঁর মধ্যেই সবকিছু আছে, তা সত্ত্বেও তিনি আলাদা এবং এগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন।

Avatar

এই ব্লগসাইট থেকে যদি কোন ভক্তদের বিন্দু মাত্রও লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment