বেদে কয়জন দেবতা? ৩৩ কোটি দেবতার বিষয়টাই বা কি?

বেদ পরিষ্কারভাবে বলে একজন এবং শুধুমাত্র একজনই ঈশ্বর আছেন। বেদে এমন কোন মন্ত্র নেই যেটা বহু ঈশ্বরের কথা বলে।

শুধুমাত্র তাই নয় অধিকন্তু বেদ দেবদূত, অবতারকে বাতিল করে দেয় যাদের কিনা প্রয়োজন হয় ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যকার এজেন্টের কাজ করতে।

বেদে উল্লেখিত বিবিধ দেবতার ব্যাপারটা কি?

দেবতা একটি ভিন্ন বিষয় কিন্তু প্রয়ই (এই শব্দ দ্বারা)  ভুলবশত পরম সত্তা ঈশ্বর অর্থ ধরা হয়। অস্তিত্ববান যেকোন কিছু জড় বা জীব যেটা আমাদের সাহায্য করে বা যেটা আমাদের নিকট উপকারী তাকে “দেবতা” বলে। তার মানে এটা নয় যে প্রত্যেকটা সত্তাই ঈশ্বর এবং আমাদের তার উপাসনা করা উচিত। 

বেদের কোথাও উল্লেখ নেই যে আমাদের এই সকল বিষয় সমূহকে উপাসনা করতে হবে। তবে হ্যা ঈশ্বর হলেন দেবতাগনেরও দেবতা তাই তাকে “মহাদেব” বলা হয়। সুতরাং একমাত্র তিনিই উপাসনার যোগ্য। 

৩৩ কোটি দেবতার বিষয়টাই বা কি?

বেদ কখনই ৩৩ কোটি দেবতার কথা বলে না, বরং ৩৩ প্রকার ( সংস্কৃত শব্দ “কটি” অর্থ প্রকার) দবতার কথা বলে। শতপথ ব্রাহ্মণে এটি পরিষ্কার বর্ননা করা হয়েছে। তারা হলোঃ

৮ বসু = ভূমি, জল, আগুন, বাতাস, আকাশ, চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজি। যেগুলো মহাবিশ্বের উপাদানকে গঠন করে যেখানে আমরা বসবাস করি।

১১ রুদ্র = ১০ প্রাণ (life force) পান, অপান, ব্যান, উদান, সমান, নাগ, কুর্ম, কুকালা, দেবদত্ত, ধনঞ্জয় এবং এক প্রন।

১২ আদিত্য = বছরের ১২ মাস।

১ বিদ্যুৎ = তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি যেটা আমাদের প্রচুর কাজে লাগে।

১ যজ্ঞ = মনুষ্যকৃত মহান, স্বার্থহীন কর্ম।

এই ৩৩ দেবতার প্রধান নিয়ন্ত্রক হলেন মহাদেবতা বা ঈশ্বর। একমাত্র তিনিই উপাস্য শতপথ ব্রাহ্মণের ১৪ তম খন্ড অনুযায়ী।

সকল বৈদিক গ্রন্থে এটি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে তারা (৩৩ দেব) ঈশ্বর নন এবং উপাস্যও নন।

এই মহাবিশ্বে ঈশ্বের বৈচিত্র রচনা রয়েছে। অনেকে ভুলবশত ঈশ্বরের সেই বৈচিত্র্যময় রচনাকে ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বর মনে করেন। ঈশ্বররের বহু গুণবাচক নাম থাকলেও তিনি একজনই।

ধরা যাক পত্রিকায় দুই ধরনের শিরোনাম এলো। ১ টি শিরোনামে উল্লেখ করা হলো নরেন্দ্র, আরেকটিতে উল্লেখ করা হলো মেদী। তারমানে এই বোঝায় না, যে ভারতে ২ জন প্রধানমন্ত্রী আছে।

বেদে কি এমন কোন মন্ত্র আছে, যা দ্বার বোঝায়  এক  এবং একজন মাত্র ঈশ্বর আছেন?

বেদে বহু মন্ত্র আছে যেটা পরিষ্কার উল্লেখ করেছে এক এবং একজনমাত্র ঈশ্বর আছেন যার কোনো সহকারী নেই, নেই কোন এজেন্ট।

অথর্ববেদ ১৩/৪/১৫-১৮

পরমাত্মা এক, তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম বলিয়া অবিহিত হয় না। যিনি তাহাকে শুধু এক বলিয়া জানেন তিনিই তাকে প্রপ্ত হন।

 ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬

এক সত্য পরমব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ,অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।

যজুর্বেদ ১৭/২৭

যে পরমেশ্বর আমাদের সবার রক্ষক, জনক এবং আমাদের সকল কর্মের ফল প্রদাতা, যিনি সমস্ত লোক লোকান্তরের জ্ঞাতা এবং অগ্নি, বায়ু,  সূর্য, চন্দ্র, ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র, বসু যম,বিষ্ণু, বৃহস্পতি, প্রজাপতি সহ সকল দেবের নামকে ধারনকারী, তিনি এক অদ্বিতীয় পরমাত্মা। সেই পরমাত্মায় আশ্রিত হয়ে অন্য সকল লোক গতিশীল হয়ে থাকে।  দুর্লভ মানব দেহকে প্রাপ্ত হয়ে এই পরমাত্মাকে জানা উচিত। এ জ্ঞান দ্বারা মনুষ্য জন্ম সফল হবে, অন্যথা নয়।

এ ধরনের বহু মন্ত্র বেদে আছে যা এক ও অদ্বিতীয় ঈশর্কেই বর্ননা করে এবং আমাদের নির্দেশ প্রদান করে অন্য কোন সত্তা, অবতার, দেবদূত, এজেন্টকে আবাহন করা ছাড়াই তাকে (ঈশ্বরকে) সরাসরি উপাসনা করতে।

Avatar

এই ব্লগসাইট থেকে যদি কোন ভক্তদের বিন্দু মাত্রও লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি।

Leave a Comment